গোদাগাড়ীতে হেরোইন আত্মসাতে হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত থানার সেই ৫ পুলিশ সদস্য

গোদাগাড়ীতে হেরোইন আত্মসাতে হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত থানার সেই ৫ পুলিশ সদস্য

গোদাগাড়ীতে হেরোইন আত্মসাতে হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত থানার সেই ৫ পুলিশ সদস্য
গোদাগাড়ীতে হেরোইন আত্মসাতে হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্ত থানার সেই ৫ পুলিশ সদস্য

অনলাইন ডেস্ক: দেশের অভ্যান্তরে হেরোইন পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ধরা হয় রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্ত এলাকাকে। ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে সবচেয়ে বেশি হেরোইন প্রবেশ করে এই সীমান্ত এলাকা দিয়েই। এর বাইরে ফেনসিডিল পাচারেও রয়েছে এ সীমান্ত এলাকাটির নাম-ডাক। এক কোথায় মাদক পাচারের জন্য দেশজুড়ে বেশ পরিচিত সীমান্ত এলাকা হলো গোদাগাড়ী। ফলে এ সীমান্ত এলাকা দিয়ে কেবল মাদক কারবারে জড়িত থেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন শত শত ব্যক্তি। মাদক ব্যবসায়ীদের এই কাতারে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে একজন সংসদ সদস্যেরও জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। এই সুযোগে এখানে কর্মরত পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কখনো কখনো সরাসরি মাদক কারবারে জড়িত বা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার অভিযোগ ওঠে। তবে এবারই প্রথম মাদক সংশ্লিষ্টতায় এক বাহককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

হেরোইন আত্মসাতের জন্য রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে রফিকুল ইসলাম (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর তাদের অপকর্ম নিয়ে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গোদাগাড়ী থানার ওসি খাইরুল ইসলাম ও ঘটনার পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আরেক পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়েও। আর সন্দেহভাজন রুহুল আমিন নামের স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ সদস্য রয়েছেন পলাতক।

তবে ঘটনা আড়াল করতে হতাকাণ্ডে জড়িত থাকা তিন পুলিশ সদস্যকে দ্রুত গোদাগাড়ী থেকে বদলি করা হয়। তবে এখনো গোদাগাড়ীতেই কর্মরত আছেন অপর দুইজন।

এদিকে হত্যাকণ্ডের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যরা প্রত্যেকেই মাদকের গডফাদারদের বন্ধু হিসেবে এখনো গোদাগাড়ীতে তাদের বেশ নাম-ডাক রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একেবারে নিচের সারির মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও রয়েছে তাঁদের বেশ সখ্যতা। তাঁদের মধ্যে এসআই আব্দুল মান্নান ছিলেন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের পরম বন্ধু। আর টাকার জন্য ধরে আনতেন ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষদের। যারা তাঁকে নিয়মিত টাকা দিতেন, তারা পেতেন মাফ। আর যারা দিতেন না তাদেরকে করা হতো হয়রানি। এই মান্নানকে গত শনিবার ক্লোজড করা হয়েছে। বাগমারা থানায় বদলি হয়ে গিয়ে সেখানেও নানা অপকর্মে জড়িত হওয়ার অপরাধে তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এসএম মাসুদ হোসেন তাঁকে ক্লোজড করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। শনিবার বিকেলে তাকে বাগমারা থানা থেকে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়।

জানা গেছে, প্রায় দুই বছর ধরে এসআই মিজানুর রহমান ও কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম এখনো গোদাগাড়ী থানায় কর্মরত আছেন। আর মাস দুয়েক আগে এসআই মান্নান ও কনস্টেবল শাহাদাতকে বাগমারা থানায় বদলি করা হয়। এসআই রেজাউলকে পাবনার ইশ^রদী থানায় বদলি করা হয়। কনস্টেবল শাহাদত বাগমারার জুগিপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে রয়েছেন।

এদিকে রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত গোদাগাড়ীর মাদারপুর ডিমভাঙ্গা এলাকার ইসাহাক আলী ওরফে ইসা (২৯) শুক্রবার রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট উজ্জ্বল মাহমুদের সামনে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দীতে পাঁচ পুলিশের হাতে রফিকুল নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেওয়ার পরে রাজশাহীতে পুলিশের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জড়িত পুলিশ সদস্যদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ঘটনাটি তদন্তে পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি করা হতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে, পুলিশের পাশাপাশি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলে গোদাগাড়ীর দেওয়ানপাড়া চরের গ্রামপুলিশ সদস্য রুহুল আমিনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইসাহাক আলী ইসা গ্রেপ্তারের পর রুহুল আমিন পলাতক রয়েছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, গোদাগাড়ী মাদকের স্পট বলে পরিচত হওয়ায় এখানে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজর থাকে সেইদিকে। ফলে দ্রুতই তারা বাড়তি অর্থ কামায় করতে মাদক ব্যবসায়ীদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে অভিযোগ ওঠা ৫ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বেশি বেপরোয়া। তারা অনেককেই ধরে আনতেন শুধু টাকা আদায়ের জন্য। না হলে মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হত। আবার টাকা পেলেই ছেড়ে দেওয়া হত। এভাবেই চলতো মাদক অভিযানের নামে মানুষকে হয়রানি ও টাকা আয়ের পন্থা। এখনো পুলিশের এই কার্যক্রম মাঝে মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় বলেও দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই।

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ গোদাগাড়ীর দেওয়ানপাড়া পদ্মার চর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পোলাডাঙ্গা গাইনপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের পুত্র রফিকুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর থানা পুলিশ- রফিকুল বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

তবে ইসার জবানবন্দীতে উঠে আসে পুলিশের দলটি গত ২১ মার্চ রাতে একই এলাকা থেকে আজাদ আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিককে (৩২) ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক করেন। ওই রাতেই পিটিয়ে হত্যা করা হয় রফিকুলকে। অথচ মাদক উদ্ধার মামলায় তাঁকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখানো হয়। পরের দিন ২২ মার্চ সকালে রফিকুল ইসলামের লাশ পদ্মার চরে পাওয়া যায়। কিন্তু লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য রামেক মর্গে পাঠালেও রফিকুল বজ্রপাতে মারা গেছেন থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

অন্যদিকে ৫ পুলিশ জড়িত থাকার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলামের ভূমিকা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। ওই ঘটনার তদারকির দায়িত্বে থাকা আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তাঁদেরও জোরালো ভূমিকা ছিলো বলেও সন্দেহ করছেন অনেকেই। এমনকি ঘটনার পরে তিনজনকে বদলি করাও হয় তাদেরকে রক্ষা করার জন্য।

তবে ওসি খাইরুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে গোদাগাড়ী থানায় যোগদান করেন। এ কারণে ওই ঘটনার কোনোকিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবেই তারা বদলি হয়েছেন।

মতিহার বার্তা ডট কম: ০২ নভেম্বর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply